ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা

কুরবানি

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - ইবাদত | NCTB BOOK

কুরবানির ধারণা
কুরবানির সমার্থক শব্দ 'উযহিয়্যাহ্’। এর আভিধানিক অর্থ ত্যাগ, উৎসর্গ ইত্যাদি । শরিয়তের পরিভাষায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যে পশু জবাই করা হয় তাকে কুরবানি বলে।

বর্তমানে যে কুরবানি প্রথা প্রচলিত আছে, তা হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সময় থেকে চলে আসছে। এটি আত্মত্যাগ ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অন্যতম মাধ্যম। এটি একটি উত্তম ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন: “কুরবানির দিনে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কাজ আল্লাহর নিকট আর কিছুই নেই। ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন কুরবানির পশুর শিং, ক্ষুর ও লোমসমূহ নিয়ে হাজির হবে ৷ কুরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদার স্থানে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা কুরবানির দ্বারা নিজেদেরকে পবিত্র কর।” (তিরমিযি)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন : “সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানি করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।” (ইবনে মাজাহ)

                                                                                          কুরবানির পটভূমি

হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা বহুবার বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছেন। সকল পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। এবার তিনি এক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হলেন। এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন, পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করতে আল্লাহ তাঁকে আদেশ করেছেন। বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান ইসমাইল অপেক্ষা দুনিয়াতে অধিকতর প্রিয় আর কী হতে পারে? অনেক চিন্তা-ভাবনা করে তিনি শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন, আল্লাহ যাতে খুশি হন তাই তিনি করবেন। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, তখন তিনি পুত্র ইসমাইলকে বললেন, “তিনি (ইব্রাহিম) বললেন : হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি জবাই করছি । এখন তোমার অভিমত কী? তিনি (ইসমাইল) বললেন : হে আমার আব্বা ! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা-ই করুন । আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” (সূরা আস্-সাফ্ফাত: ১০২)

ছেলের এ সাহসিকতাপূর্ণ উত্তর পেয়ে নবি ইব্রাহিম (আ.) খুশি হলেন। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি পুত্র ইসমাইলের গলায় ছুরি চালালেন । এবারের পরীক্ষাতেও ইব্রাহিম (আ.) উত্তীর্ণ হলেন। পবিত্র কুরআনে আছে-

অর্থ: “তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম: হে ইব্রাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যিই পালন করলে।” (সূরা আস্-সাফ্ফাত, আয়াত ১০৪-১০৫ )

আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা এনে ইসমাইলের জায়গায় ছুরির নিচে শুইয়ে দিলেন। হযরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল। এ অপূর্ব ত্যাগের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য তখন হতেই কুরবানি প্রথা চালু হয়েছে। এটি আজ মুসলিম সমাজে একটি পবিত্র ধর্মানুষ্ঠানরূপে স্বীকৃত।

 

কুরবানির নিয়মাবলি ও বিধিবিধান

কুরবানির কতিপয় বিশেষ নিয়মাবলি ও বিধিবিধান নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

১. জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ফজর হতে ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত যদি কেউ নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাহিবে নিসাব) হয়, তবে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব । মুসাফিরের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। 

২. জিলহজ মাসের ১০, ১১ এবং ১২ তারিখ তিন দিন কুরবানির সময়। এ তিন দিনের যেকোনো দিন কুরবানি করা যায়। তবে প্রথম দিন কুরবানি করা উত্তম।

৩. ঈদুল আযহার নামাযের আগে কুরবানি করা সঠিক নয় । নামায আদায়ের পর কুরবানি করতে হয়।

8. সুস্থ সবল ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট ইত্যাদি গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানি করতে হয় গরু, মহিষ এবং উটে এক হতে সাত জন পর্যন্ত শরিক হয়ে কুরবানি করা যায়।

৫. কুরবানির ছাগলের বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে । উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। দুম্বা ও ভেড়ার বয়স ছাগলের মতো। তবে ছয় মাসের বেশি বয়সের দুম্বার বাচ্চা যদি এরূপ মোটাতাজা হয় যে, এক বছরের অনেকগুলো দুম্বার মধ্যে ছেড়ে দিলে চেনা যায় না, তবে সেরূপ বাচ্চা দিয়ে কুরবানি জায়েয। কিন্তু ছাগলের বাচ্চার বয়স এক বছর না হলে কুরবানি জায়েয হবে না।

৬. কুরবানির গোশত সাধারণত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিব মিসকিনকে, একভাগ আত্মীয় স্বজনকে দিতে হয় এবং একভাগ নিজের জন্য রাখা উত্তম।

৭. নিজ হাতে কুরবানি করা উত্তম।

৮. কুরবানির প্রাণী দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে কিবলামুখী করে, ধারালো অস্ত্র দ্বারা 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার' বলে জবাই করতে হয়।

প্রত্যেক মুসলমানের উচিত কুরবানির সময় একাগ্রতার সাথে উত্তম পশু কুরবানি করা। তাতে তাঁরা অনেক সাওয়াব পাবে। পরস্পরের মধ্যে আন্তরিকতা বাড়বে এবং হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে কুরবানির পটভূমি ও নিয়মাবলি আলোচনা করবে।
Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion